জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসঃ প্রত্যাশা এবং প্রাপ্তি
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার সদরঘাটে অবস্থিত একটি
স্বায়ত্বশাসিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। ২০০৫ সালে বাংলাদেশের জাতীয়
সংসদে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০০৫ পাশ করার মাধ্যমে এই প্রতিষ্ঠানটি
পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপ নেয়। বর্তমানে মোট
ছয়টি অনুষদের অধীনে ৩১ টি বিভাগের ও একটি ইন্সিটিউটের মাধ্যমে এখানে শিক্ষা
কার্যক্রম চলছে । এখানে প্রায় ২৩,০০০ ছাত্র-ছাত্রী এবং ১,০০০ জন শিক্ষক রয়েছেন ।সর্বমোট ১০টি হল রয়েছে; তন্মধ্যে ১টি ছাত্রীদের হল।কিন্তু
অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হল এই সবগুলো হলই বেদখল হয়ে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়
প্রতিষ্ঠার পূর্ব থেকেই।
কলেজ থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে
রূপান্তরিত হওয়ার পর বিভিন্ন সময় আবাসনের দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন
বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা। গত বছরের আগস্টে প্রায় মাসখানেক শিক্ষার্থীরা
পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডে কেন্দ্রীয় কারাগারের খালি জায়গায় ও কেরানীগঞ্জের
নিজস্ব জায়গায় আবাসিক হল নির্মাণের দাবিতে আন্দোলন করেন। ওই পরিস্থিতিতে তখন ওই
বছরের সেপ্টেম্বরে মন্ত্রিসভার এক বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, জগন্নাথ
বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্প্রসারণ হবে কেরানীগঞ্জে। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেনা ২৫
বিঘা জমির পাশে আরও প্রয়োজনীয় জমি অধিগ্রহণ করে একাডেমিক ভবন, আবাসিক হলসহ পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য যা যা করা প্রয়োজন,
তা করা হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, তারই ধারাবাহিকতায় গত মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন’ নামে একটি প্রকল্প উপস্থাপন করা হয়। বৈঠকশেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল প্রকল্প সম্পর্কে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। তিনি বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সংক্রান্ত একটি প্রকল্প উপস্থাপন করা হলে সেটি অনুমোদন না দিয়ে ফেরত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, কেরানীগঞ্জ ও ঢাকায় বিচ্ছিন্নভাবে নানা জায়গায় প্রকল্প না করে সমন্বিতভাবে বিশ্ববিদালয়টির উন্নয়ন করতে হবে। এজন্য আগামী ৭ দিনের মধ্যে জমি খুঁজে বের করতে বলেছেন তিনি।
এর ধারাবাহিকতায়
গত(১৪/০৭/১৭ইং) শুক্রবার কেরানীগঞ্জে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয়
উপাচার্য ডঃ মীজানুর রহমান, বিদ্যুৎ ও
জ্বালানী প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু সহ একটি উচ্চ পর্যায়ের টীম কেরানীগঞ্জ ভিজিট করে।
ক্যাম্পাস করার
জন্য কেরানীগঞ্জে প্রায় দুইশত একর জমি পছন্দ করে ড্রোনের মাধ্যমে এর ছবি সংগ্রহ
করা হয়েছে। ছবিগুলো মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে দেখানো হবে।
তবে ক্যাম্পাস কেরানীগঞ্জে স্থানান্তর নাকি এটি দ্বিতীয়
ক্যাম্পাস তা নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে।ক্যাম্পাসের বড় একটা অংশ কেরানীগঞ্জে যেতেই পারে, কিন্তু
বর্তমান ক্যাম্পাসকে হাতছাড়া করে না।শত বছরের ইতিহাস, আন্দোলনের সাক্ষী পুরান
ঢাকার এই ক্যাম্পাস।শত বছর আগে পুরান ঢাকায় শিক্ষার যে গোড়াপত্তন হয়েছিল এই
বিদ্যাপীঠের মাধ্যমে তার অধিকার ছাড়তে নারাজ শিক্ষার্থীরা।
তবে বিশ্লেষকরা মনে করেন
একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে যে অবকাঠামো প্রয়োজন তা
কেরানীগঞ্জে দ্বিতীয় ক্যম্পাস তৈরী করে জবি শিক্ষার্থীদের উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত
সম্ভব হবে।
আর তাই ১৫০ বছরের
পুরোনো ইতিহাস ও রাজধানীকেন্দ্রিক জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা
এবার তাদের প্রত্যাশাকে প্রাপ্তিতে বরণ করে নিতে চায়।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন